শিশুদের সাথে মুহাম্মদ (সাঃ) এর আচরণ

মুসলিম শরীফে এসেছে একদা রাসুল (সাঃ) এর কাছে হযরত আকরা' ইবনে হাবেস (রাঃ) উপস্থিত ছিলেন। তিনি ছিলেন একটু কঠিন প্রকৃতির মানুষ। তিনি রাসুল (সাঃ)কে দেখলেন যে আল্লার রাসুল (সাঃ) হাসান ও হুসাইন (রাঃ) কে চুম্বন করছেন। স্বগতোক্তিতে তিনি বললেনঃ আপনারা কি আপনাদের সন্তানদেরকে চুম্বন করেন? আল্লাহর কসম! আমার দশজন সন্তান আছে আজ পর্যন্ত আমি তাদের কাউকে চুম্বন করি নাই। রাসুল (সাঃ) কিছুটা রাগত স্বরে বললেনঃ তোমার অন্তর থেকে দয়ামায়া উঠে গেলে আমি কি করতে পারি?

সুতরাং, আপনার আমার সবার উচিত দয়ামায়ার অধিকারী হওয়া। দয়ামায়ার সাথে কাউকে শিষ্টাচার শিক্ষা দেয়া। দেখুন! হযরত ফাতেমা (রাঃ) এর পিচ্চি ছেলে হযরত হাসান (রাঃ) শিশু অবস্থায় সাদকার খেজুরের দিকে হাত বাড়িয়ে খেজুরটি মুখে তুলতে যাচ্ছেন। রাসুল (সাঃ) তার হাত থেকে তা নিয়ে নিলেন এবং বললেনঃ তুমি কি জাননা যে আমরা সাদকার মালামাল খাই না? তিনি তাকে মারধর করেন নি বরং অত্যন্ত বিনম্র ভাবে তাকে একটি বিষয় শিখিয়ে দিলেন।

হযরত জাবের বিন সামুরাহ (রাঃ) তখন শিশু ছেলে। তিনি বলেনঃ রাসুল (সাঃ) এর সাথে ফজরের নামাজ পড়লাম। নামাজ শেষে রাসুল (সাঃ) বের হলেন। বাইরেই সাক্ষাৎ হল কিছু ছোটছোট বালকের সাথে। দয়ার নবী রাসুল (সাঃ) এক এক করে প্রত্যেক বালককে আদর করে চেহারায় হাত বুলাচ্ছেন। আমার চেহারায় ও তিনি হাত বুলিয়ে দিলেন আমি তার হাত শুকে দেখলাম। মনে হল যেন তার হাতখানা এই মাত্র কোন আতরের সমুদ্র থেকে বের করা হয়েছে। তিনি তার গালে রাসুল (সাঃ) এর হস্ত স্পর্শের কথা ভুলে যান নি। (মুসলিম শরীফ)
আমার কাছে (আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ইসলামী চিন্তাবিদ) একজন সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি এসে বললেনঃ দশ বছর বয়সী আমার এক ছেলে আছে । সে সুরা ইউসুফ, সুরা রাদ ও সুরা ইবরাহিম মুখস্ত করেছে আপনার ক্যাসেট থেকে।
আমি বললামঃ আলহামদুলিল্লাহ।
তিনি বললেনঃ আগামী শুক্রবারে আমি তাকে সঙ্গে করে মসজিদে নিয়ে আসব।
-এটাতো সাধারণ বিষয়।
- না। এটা কোন সাধারণ বিষয় নয়।
-কেন?
-এই নিন এটা একটা গিফট। আমি আশা করব আপনি এটা মসজিদে রাখবেন। আগামী সপ্তাহে যখন আমি তাকে মসজিদে নিয়ে আসব । সে আপনার কাছে গেলে তাকে আপনি সালাম দিবেন এবং এ উপহার টুকু দিবেন যেন এটা আপনার পক্ষ থেকে দিচ্ছেন। আর তার জন্য দোয়া করবেন যেন মসজিদ, ইসলাম ও আপনার সাথে তার সম্পর্ক বৃদ্ধি পায়। দেখুন, কত সুন্দর চিন্তা।
এভাবে যখন কোন শিশু কোন বড় আলেমের কাছে গিয়ে তার সাথে সালাম আদান-প্রদান করে তখন সে বাড়ীতে গিয়ে খুশি হয়ে সগৌরবে মাকে বলে মা! আমি অমুকের সাথে সালাম আদান-প্রদান বা মুসাফাহা করেছি। তখন মা ও তাকে ধন্যবাদ জানায়। এ জন্যই উক্ত সাহাবী রাসুল (সাঃ) এর হাতের ঘ্রান কখনও ভুলতে পারেন নি।

মুসলিম শরীফে এসেছে- হযরত উমর ইবনে আবি সালামা (রাঃ) যারা রাসুল (সাঃ) এর সান্নিধ্যে থেকে শিষ্টাচার শিখেছেন তাদেরই একজন। তিনি বলেনঃ আমি ছোট্ট বেলায় রাসুল (সাঃ) এর কোলে ছিলাম। খাওয়ার সময় আমার হাত প্লেটের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াত।(একবার এখান থেকে আরেকবার ওখান থেকে খাওয়া ) রাসুল (সাঃ) বললেনঃ বিসমিল্লাহ বল আর তোমার ডান হাত দ্বারা সামনের দিক থেকে খাও।
এখন আমাদের কতই না প্রয়োজন আল্লাহর রাসুল (সাঃ) এর আদর্শের দিকে ফিরে আসা। এখানে রাসুল (সাঃ) থেকে আদর্শ মুরুব্বী হওয়ার শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি। কেননা, তিনি ছিলেন বিশ্বমানবতার শিক্ষক ও তাদের নিকট আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত রাসুল। শিশুদের সাথে আমাদের আচার ব্যবহার কেমন হবে তা আমরা তার কাছ থেকে শিখে নিতে পারি।
(শায়খ মুহাম্মদ হাসসানের খুতবাহ থেকে অনুদিত)