তাওবাঃ সংগা ও শর্তাদি

*তাওবা কি?
তাওবা আরবী শব্দ।পবিত্র কুরান মাজীদে এ শব্দটি 6 বার বর্ণিত হয়েছে। এর শাব্দিক অর্থঃ-
অনুতপ্ত হওয়া, ফিরে আসা, প্রত্যাবর্তন করা ইত্যাদি।
পারিভাষিক অর্থে- গুনাহ করার পর অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করা ও উক্ত গুনাহের কাজ বর্জন ও তা পূণরায় না করার দৃঢ় অঙ্গিকার করাকে তাওবা বলে।
অনুতপ্ত না হয়ে যদি শুধুমাত্র মুখে হাজার হাজার বার আস্তাগফিরুল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ বুলি আওড়াতে থাকি তা তাওবা বলে গণ্য হবে না। কারণ, তাওবা হল অন্তরের জিনিস। আল্লাহ তায়ালা অন্তরকে দেখবেন তা গুনাহ করার পর অনুতপ্ত হল কিনা? যদি কোন গুনাহগার বান্দা মুখে আস্তাগফিরুল্লাহ নাও উচ্চারন করে বরং অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায় এবং উক্ত গুনাহের দিকে পুনরায় ফিরে না আসার সংকল্প করে তাহলে তা তাওবা বলে গণ্য হবে। আল্লাহ তায়ালা তাওবাকারীর তাওবাতে অত্যন্ত খুশি হন।
আল্লাহ তায়ালা কুরান মাজীদে বলেনঃ
قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَى أَنفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا مِن رَّحْمَةِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعاً إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيم
বলুন! হে আমার বান্দারা! যারা গুনাহ করে নিজের জীবনের উপর জুলুম করেছ তোমরা আমার রহমত থেকে নিরাশ হইওনা। আল্লাহ তায়ালা সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেবেন তিনি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা যুমারঃ৫৩)
রাসূল (সাঃ) বলেনঃ যদি কোন পথচারী মরুভূমির মধ্যে নির্জন স্থানে উট বেধে রেখে ক্লান্ত হয়ে বিশ্রাম নিয়ে ঘুম থেকে উঠে দেখে তার উট, ও গচ্ছিত খাবার-দাবার উধাও হয়ে গেছে। মৃত্যুর প্রহর গুনতে গুনতে আবার ঘুমিয়ে পড়ল। ঘুম থেকে উঠে দেখে তার হারানো উট ফিরে এসেছে এবং তার খাবার দাবার ও তার কাধে রয়েছে। এটা দেখে সে যত খুশি হয় আল্লাহ তায়ালা কোন বান্দার তাওবাতে তার চেয়ে অনেক বেশী গুণে খুশি হন। (সংক্ষেপিত, বুখারী শরিফ)
*বান্দার তাওবাতে আল্লাহর আগ্রহঃ
আল্লাহ তায়ালা সব সময় অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকেন কখন তার বান্দা নিজের ভুল বুঝতে পেরে তার দরবারে কান্নাকাটি করে তাওবা করবে ? একজন জন্মদাত্রী মাতা তার শিশুকে যেমন ভালবাসেন আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদেরকে তার চাইতেও সহস্রগুণ বেশী ভালবাসেন।
হাদিস শরীফে এসেছেঃ-

عن أبو موسى الأشعري - رضي الله عنه - : أَنَّ رسولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قال : «إنَّ اللِهَ -عزَّ وجلَّ- يبْسُطُ يدَهُ باللَّيْلٍ ليَتوبَ مُسيءُ النهار ، ويبسُطُ يدَه بالنَّهار ليتُوبَ مُسيء الليلِ، حتى تطْلُعَ الشمسُ من مغرِبِها ». أخرجه مسلم.
অর্থাৎ, হযরত আবু মুসা আশআরী (রা:) হতে বর্ণিত,রাসুল (সা:) বলেন: আল্লাহ তায়ালা রাত্রিবেলায় নিজ হস- সম্প্রসারণ করেন যেন দিনে গুনাহকারী বান্দা তাওবা করে ফিরে আসে। আর তিনি দিনের বেলায় নিজ হস- সম্প্রসারণ করেন যেন রাত্রিবেলায় গুনাহকারী ব্যক্তি তাওবা করে ফিরে আসে। এমনিভাবে চলতে থাকবে পশ্চিম দিক হতে সূর্য উদিত হওয়ার আগ পর্যন-।(মুসলিম শরীফ)
*তাওবাহর শেষসীমাঃ
কিয়ামতের আগে পশ্চিম দিগন্তে সূর্য উদয়ের আগ মুহুর্ত পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালা বান্দার তাওবা কবুল করবেন। তাই, বান্দা যত বড় গুনাহই করুক না কেন আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করলে তিনি তাকে মাফ করে দিবেন। সে গুনাহ চুরি, ডাকাতি,ছিনতাই, যিনা-ব্যভিচার, খুন রাহাজানি যাই হোক না কেন। তাই, সুপ্রিয় মুসলিম ভাই! আসুন আমরা যারা গুনাহ করে ফেলেছি তারা আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করে নিজেদের জীবনকে পরিশুদ্ধ করে নতুন করে জীবন গড়ি। হাদিস শরীফে রাসুল (সাঃ) বলেনঃ
عن أبو هريرة - رضي الله عنه - : أَنَّ رسولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قال : « مَنْ تابَ قبلَ طُلوعِ الشَّمسِ مِن مَغْربها ، تابَ اللّه عَليهِ ». أخرجه مسلم
অর্থাৎ, হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুল(সাঃ)বলেছেন:যে ব্যক্তি পশ্চিম দিক হতে সূর্য উদিত হওয়ার পূর্বে তাওবা করবে আল্লাহ তার তাওবা কবুল করবেন।(মুসলিম শরীফ)
অন্য হাদিসে এসেছেঃ-
عن عبد الله بن عمر بن الخطاب - رضي الله عنهما - : أَنَّ النَّبي صلى الله عليه وسلم قال : «إنَّ اللّهَ يقبلُ توبة العبدِ ما لم يُغَرغِرْ ». أخرجه الترمذي.
অর্থাৎ, হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমার বিন খাত্তাব (রা:) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা:) বলেন: নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা বান্দার তাওবা কবুল করতেই থাকবেন যতক্ষন না মৃত্যুর সময় গরগর শব্দ শুরু হয়ে যায়। (তিরমিজী)
*তাওবাহের শর্তঃ
তাওবার কয়েকটি শর্ত রয়েছে। শে’রে খোদা আলী (রাঃ) বলেনঃ ছয়টি জিনিসের সমন্নয়ে তাওবাহ হয়। সেগুলো হলঃ
১। অতীতের গুনাহের জন্য অনুতপ্ত হওয়া।
২। যেসব ফরয ও ওয়াজিব কাজ ছেড়ে দেয়া হয়েছে তা সাধ্যমত আদায় করা।
৩। কারও ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে নিয়ে থাকলে তা তাকে ফেরত দেয়া।
৪। কাউকে কষ্ট দিয়ে থাকলে মাফ চেয়ে নেয়া।
৫। ভবিষ্যতে উক্ত গুনাহ না করার দৃঢ় সংকল্প গ্রহন করা।
৬। নিজেকে যেভাবে আল্লাহর নাফরমানী করতে দেখেছিল এখন তেমনি নিজেকে আল্লাহর আনুগত্য করতে দেখা। (তাফসীরে মাজহারী)
তাই, সুপ্রিয় মুসলিম ভাই! আসুন আমরা যারা গুনাহ করে ফেলেছি তারা আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করে নিজেদের জীবনকে পরিশুদ্ধ করে নতুন করে জীবন গড়ি। হাদিসে এসেছেঃ التَّائِبُ مِنَ الذَّنْبِ كَمَنْ لاَ ذَنْبَ لَهُ
যে গুনাহ থেকে তাওবা করল সে এমন হয়ে গেল যেন সে কোন গুনাহই করেনি।(বায়হাকী, জামেউল আহাদিস, ইবনে মাজাহ)