সাত কেরাতের ইতিহাস

আমরা জানি, আল্লাহর বাণী পবিত্র কুরান মাজীদ পৃথক পৃথক সাত কেরাতে নাজিল হয়েছে। রাসুল (সাঃ) বলেনঃ إِنَّ الْقُرْآنَ أُنْزِلَ عَلَى سَبْعَةِ أَحْرُفٍ فَاقْرَءُوا مِنْهُ مَا -تَيَسَّرَ
অর্থাৎ, নিশ্চয় কুরান মাজীদ সাত হরফে(সাতটি ভিন্ন ভিন্ন কেরাতে) নাজিল হয়েছে। এগুলো থেকে যেটি সহজ মনে হয় তাই তোমরা পড়।(বুখারী শরিফ, হাদীস নং-২৪১৯) সমস্ত উলামায়ে কেরাম এ কথায় একমত। এখানে বিভিন্ন কেরাতে কুরান পড়াতে খুব বেশি পার্থক্য নেই।
বিভিন্ন কেরাতের পার্থক্য সংক্ষেপে এভাবে বলা যায়ঃ
* কোন কেরাতে একটা নির্দিষ্ট স্থানে ইদ্গাম করা হয় কিন্তু অন্য কেরাতে তা করা হয় না।
·* কোন কোন কেরাতে কিছু জায়গায় ইমালাহ করা হয় কিন্তু অন্য কেরাতে তা করা হয় না।
* কোন কেরাতে মাদ্দে বদল দুই হারকাত(এক আলিফ) পরিমাণ দীর্ঘ করা হয়, অন্য কেরাতে ছয় হারকাত(তিন আলিফ) পরিমাণ দীর্ঘ করতে হয়।
* আরবী শব্দ شئ কোন কেরাতে পড়া হয় “শাইয়িন” কোন মাদ্দ ছাড়া, কিন্তু অন্য কেরাতে তা “শাই...ইয়িন” ছয় হারকাত (তিন আলিফ)পরিমাণ দীর্ঘ করে পড়তে হয়।
* কিছু কিছু ক্ষেত্রে একটি শব্দ (ক্রিয়াবাচক পদ) কোন কেরাতে “ইয়া” দিয়ে আবার কোন কেরাতে “তা” দিয়ে এসেছে। এখানে একটি কেরাতে শব্দটিকে নিষেধাজ্ঞামূলক ও অন্য কেরাতে নিছক নাবোধক(নিষেধাজ্ঞা মূলক নয়) হিসাবে তুলে ধরা হয়েছে।
* কোথাও কোথাও যবর যেরের পার্থক্য রয়েছে। সেখানে একটি বাক্যে শব্দটিকে আদেশবাচক এবং অন্যটিতে সংবাদমূলক ব্যবহৃত হয়েছে।
* কোথাও কোথাও কোন কাজকে আল্লাহ তায়ালা নিজের দিকে সম্বন্ধ করে উল্লেখ করেছেন আবার কোথাও তৃতীয় পক্ষের দিকে সম্বন্ধ করেছেন। যেমনঃ সূরা নাহলের ১১ নং আয়াতে আল্লাহ বলেনঃ يُنبِتُ لَكُم بِهِ الزَّرْعَ وَالزَّيْتُونَ وَالنَّخِيلَ وَالأَعْنَابَ (তিনি তোমাদের জন্যে ফসল-ফলাদি,যাইতুন, খেজুর ও আঙ্গুর উৎপাদন করেন) অন্য কেরাতে এ আয়াতটি এসেছে এভাবেঃ ُننبِتُ لَكُم بِهِ الزَّرْعَ وَالزَّيْتُونَ وَالنَّخِيلَ وَالأَعْنَابَ (আমি তোমাদের জন্যে ফসল-ফলাদি,যাইতুন, খেজুর ও আঙ্গুর উৎপাদন করি।)
* কোথাও সম্বোধন করে শব্দ উল্লেখ করা হয়েছে আবার কোথাও সংবাদ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমনঃ আল্লাহর বাণীঃ أفلا تعقلون (তোমরা কি বুঝ না?) একই আয়াতে অন্য কেরাতে এসেছে أفلا يعقلون(তারা কি বুঝে না?)
* কোথাও একটি শব্দ তাশদীদযুক্ত ভাবে আবার অন্য কেরাতে তাশদীদ ছাড়া শব্দ উল্লেখিত হয়েছে।
* কোথাও একটি শব্দ একবচন এবং অন্য কেরাতে বহুবচনে ব্যবহৃত হয়েছে।
* কোথাও একটি শব্দকে পুং লিঙ্গ এবং অন্য কেরাতে স্ত্রীলিঙ্গ হিসেবে উল্লেখিত হয়েছে।
* কোথাও কোন শব্দে ই’রাবের পার্থক্য রয়েছে। যেমনঃ সূরা মায়িদার ৬ নং আয়াতে أرجلكم إلى الكعبين –এর প্রথম শব্দে কোন কেরাতে “লাম” অক্ষরে যবর আবার কোন কেরাতে যের দিয়ে বর্ণিত হয়েছে।
* কোন কোন শব্দের কোন নির্দিষ্ট অক্ষর কোথাও হারকাতযুক্ত আবার কোথাও সাকিনযুক্ত বর্ণিত হয়েছে।
* কোথাও কোথাও নির্দিষ্ট অক্ষর বিভিন্ন ভাষার পার্থক্যের কারণে শব্দের পার্থক্য হয়েছে।
সাত কেরাত হওয়ার হেতু কিঃ
রাসূল (সাঃ) কে জিবরাইল (আঃ) বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কেরাতে কুরান শুনাতেন। রাসূল (সাঃ) বলেছেন যে, প্রতিটি তেলাওয়াতই সয়ং সম্পুর্ণ। তাই, তিনি তার উম্মতকে যেকোন কেরাতে তেলাওয়াত করার অনুমতি দিয়েছেন। এগুলো সবই(সাত কেরাতই) আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসুল (সাঃ) এর উপর নাজিলকৃত এবং তার পক্ষ থেকে মুতাওয়াতির রেওয়ায়েতে আমাদের কাছে এসেছে। এগুলো সবই কুরান এটা বিশ্বাস করা জরুরী।
এবার আসুন! আমরা এ সাত কেরাত কাদের কাছ থেকে আমরা বিস্তারিতভাবে পেয়েছি তাদের নাম জেনে নিই। যারা এ কীরাত সমূহকে প্রচার প্রসারে আত্ননিয়োগ করেছিলেন। সে সন্মানিত ব্যক্তিবর্গ হলেনঃ

১.আব্দুল্লাহ ইবনে কাসীর আল-মাক্কী।
২.নাফে’ ইবনে আবী নাঈম আল-মাদানী।
৩. আব্দুল্লাহ ইবনে আমের আশ-শামী।
৪. আবু আমর ইবনে আলা আল-বাসরী।
৫.আসেম।
৬.হামজাহ।
৭.কাসায়ী আল-কুফী।

এদের কাছ থেকে অন্য চৌদ্দজন বর্ণণা করেছেন। তারা হলেন:-
(১)আব্দুল্লাহ ইবনে কাসীর আল-মাক্কী হতে ক. আল-বাজ্জী ও খ. কামবাল।
(২) নাফে’ ইবনে আবী নাঈম আল-মাদানী হতে ক. ওয়ারশ ও খ. ক্বালুন।
(৩)আব্দুল্লাহ ইবনে আমের আশ-শামী হতে ক. ইবনে যাকওয়ান ও খ. হিশাম।
(৪) আবু আমর ইবনে আলা আল-বাসরী হতে ক.আবু আমর আদ-দুরী ও খ. আবু শুয়াইব আস-সুসী।
(৫)আসেম হতে ক. আবু বাকার ও খ. হাফস।
(৬) হামজাহ হতে ক. খালফ ও খ. খাল্লাদ।
(৭)কাসায়ী আল-কুফী হতে ক. আবুল হারেস ও খ.আবু উমার আদ্‌-দুরী।